

প্রকাশিত: ০৭, নভেম্বর - ২০১৯ - ০৫:৩৭:৪০ PM
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, শেখ হাসিনা ছিলেন সবচেয়ে প্রেডিক্টেবল রাজনীতিবিদ। যার চেহারা দেখলেই সবকিছু বোঝা যেত। যদি তিনি কারো উপর রা’গ করতেন তাহলে সেটা স্প’ষ্টভাবে বোঝা যেত তার চে’হারায়, ফুটে উঠত তিনি তার উপর ক্ষুদ্ধ। কারো উপর তিনি খুশি থাকলে সেটাও তার চেহারায় ফুটে উঠত যে, তিনি তার উপর খুশি। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ সভাপতিকে বোঝাই যেন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে। এমনকি যারা আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তারাও জানেন না যে, শেখ হাসিনার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে। কেন তিনি এ রকম হলেন?
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করছেন, টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে যে দুর্বৃত্তায়ন, যে দুনী’তি ও সুবিধাবাদী চক্র ঢুকে পড়েছে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই শেখ হাসিনা এই মূর্তি ধারণ করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে, শেখ হাসিনার চারপাশে থাকা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের আশ্রয় প্রশ্রয়ে সুবিধাবাদীরা আওয়ামী লীগে জায়গা করে নিয়েছে এবং জাঁকিয়ে বসেছে। সেই কারণেই আওয়ামী সভাপতির ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতদেরকেও তার পদক্ষেপগুলো সম্বন্ধে জানাচ্ছেন না।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যে সমস্ত পদক্ষেপগুলোর ব্যপারে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী কিছুই জানতেন না। তার মধ্যে রয়েছে;
১। শু’দ্ধি অ’ভিযান: শুদ্ধি অভিযানের বিষয়টি শুরু হয়েছিল ১৪ সেপ্টেম্ব থেকে এবং ঐ দিনই ছাত্রলীগের দুই নেতাকে অব্য’হতি দেওয়া হয়। দুই নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো কেন্দ্রীয় নেতা ঘুনাক্ষরেও এ সম্বন্ধে জানতেন না। অনেক নেতাই মনে করছিলেন যে, ছাত্রলীগের কমিটিই হয়তো বাতিল করে দেওয়া হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল না করে শু’দ্ধি অভিযানের মাধ্যমে যারা বিতর্কিত এবং সুবিধাবাদী তাদের চিহ্নিত করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।
২। শেখ সেলিম পরিবারের বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা: আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী মনে করতেন শেখ সেলিম পরিবার হলো বঙ্গবন্ধুর আত্মীয় পরিবার। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা স্প’ষ্ট বার্তা দিয়েছেন আত্মীয় হোক আর যেই হোক না কেন সে যদি অন্যায় করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি শেখ সেলিমের ছোটো ভাই শেখ মারুফকে গণভবনে নিষিদ্ধ করেছেন। শেখ সেলিমের বোনের জামাই ওমর ফারুক চৌধুরীকে যুবলীগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এমনকি ওমর ফারুক চৌধুরীর সমস্ত ব্যাংক একাউন্টও জব্দ করা হয়েছে। আর শেখ হাসিনা যে কঠোর অবস্থানে যাবেন সেটা কেউ ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেননি।
৩। অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর ক’মিটি: আজ কৃষক লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষক লীগের কমিটি ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মোটামুটি অন্ধকারেই ছিলেন। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং যুবলীগের সম্মেলনেও যে কমিটি হবে, সেই কমিটিতেও তারা থাকবেন আর না থাকবেন সে ব্যপারেও একক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনা। এমনকি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যারা নিয়মিত গণভবনে যান তারাও এ ব্যপারে কিছু জানেন না।
৪। আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা: আওয়ামী লীগে অনুপ্র’বেশকারীদের তালিকাটি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দদের হাতে তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ১৫০০ অনুপ্র’বেশকারীর তালিকা প্রস্তুত করেছিল শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি বিশেষ টি’ম। যারা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী নন। এবং এই তালিকা তৈরি হওয়ার আগপর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো নে’তাও জানতেন না যে এই তালিকায় কে আছে কারা আছে।
এই সমস্ত আনপ্রেডিক্টেবল সিদ্ধান্তের কারণে আগামী কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনা কাকে নেতৃত্বে আনবেন বা নতুন কমিটিতে কারা থাকবেন, সে নিয়ে অনিশ্চয়তার ধুম্রজাল চলে এসেছে। শেখ হাসিনা এখন জনগণের কাছে সবচেয়ে আস্থাভাজন ও বিশ্বাসভাজন নেতা হলেও দলের নেতাদের কাছে এক অচেনা এবং অজানা নেতা। শেখ হাসিনা যেন এখন দলের নেতাদের কাছে একটি আতঙ্কের নাম।